টাঙ্গাইলের রসুলপুরে দেড়শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’ চলছে

0 148

স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের কাছে খুবই আকর্ষনীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি। এই মেলাটি জামাই মেলা নামেই পরিচিত। মেলায় ঘুরতে আসা সুকুমার সাহা ও প্রদীপ সাহা নামের একাধিক জামাই এমন কথা টিনিউজকে বলেন। রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারেজ মিয়া টিনিউজকে বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। বাড়ির মেয়ের জামাইরা মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি আসায় ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতিবছর জমে উঠে। এটি জেলার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বড় একটি মেলা।




টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে তিন দিনব্যাপী ‘জামাই মেলা’ শুরু হয়েছে। রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত। এক দিকে ঈদের আনন্দ অপর দিকে মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা টিনিউজকে জানান, প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশে পাশের অন্তত ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা। এছাড়া মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। তিন দিনে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।




সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক দোকান বসেছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দোকানও আছে। এছাড়া এ মেলায় একাধিক ফার্নিচারের দোকানও বসেছে। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েরা এ মেলা উপভোগ করছে। রসুলপুরের কথা সাহিত্যিক রাশেদ রহমান টিনিউজকে বলেন, জামাই মেলার বয়স দেড়শ’ বছরের মতো হবে। এ এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজাপার্বণের মতোই এই মেলা উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলা সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। এছাড়া রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হয়েছে। এতে করে মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে।




পার্শ্ববর্তী বড় বাসালিয়া গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন টিনিউজকে বলেন, এমনি আমি রডমিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর যাবত আকড়ি বিক্রি করি। বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। অন্যান্য মেলার চেয়ে এ মেলা অনেক নিরাপদ। অপর ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম টিনিউজকে বলেন, এটি টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুরে থেকেই নারী পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করছে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন।
জামাই মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসেম টিনিউজকে বলেন, মেলায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে। এই মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে। মেলায় খাবার আইটেম, খেলনাসহ বিভিন্ন ফার্নিচারও পাওয়া যায়।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

ব্রেকিং নিউজঃ