জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মধুপুরে অনুপস্থিত ৬১ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার
গত ১ নভেম্বর রবিবার শুরু হওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় (কারিগরি শাখাসহ) টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ৬টি কেন্দ্রে অনুপস্থিত রয়েছে ৬১ ছাত্রী। এদের মধ্যে অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুপস্থিত ছাত্রীদের মধ্যে ৩৯ জন জেএসসি, ১৮ জন জেডিসি এবং ৪ জন কারিগরি শাখার পরীক্ষার্থী ছিল। অনুপস্থিতির কারণ জানতে গিয়ে উপজেলার ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তারা জানিয়েছেন, দুই-একজন ছাড়া অধিকাংশই বিয়ের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। আবার অনেকে বিয়ের পরও পরীক্ষা দিচ্ছে। এবার প্রথম পঁচিশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ শিক্ষার্থী জেএসসিতে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও বিয়ে হওয়ায় জেমি আক্তার ও সাবিনা ইয়াসমিন নামের দুই ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ধলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিবাহিত ৩ জনের শুধু শরিফাই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আলোকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই মেয়ের বিয়ে ও দুই ছাত্র মামলার আসামি হয়ে জেলে থাকায় তারাও পরীক্ষায় অনুপস্থিত। গাছাবাড়ি দাখিল মাদরাসার সুমি আক্তার বিয়ে হওয়ার পরও পরীক্ষা দিচ্ছে। এছাড়া, টেংরি মহিলা মাদরাসার ৩ জন আদর্শ মাদরাসার ২ জন, অরণখোলা দাখিল মাদরাসার ১ জন মেয়ের বাল্যবিয়ে হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। উপজেলার ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ৩ হাজার ৪শ ১৭ শিক্ষার্থী ৩টি কেন্দ্রে এবং ১৯টি মাদরাসার ৬৫৯ শিক্ষার্থী ১টি কেন্দ্রে এবং কারিগরি শাখার ৩ বিদ্যালয়ের ২৯৯ জন পরীক্ষা দিতে নিবন্ধন করেছিল। শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৪২১ জনের মধ্যে অনুপস্থিত ১৫ জনের ১০ জনই ছাত্রী। তাদের ৯ জনের বাল্যবিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা পরীক্ষা দিচ্ছে না। রাণী ভবানী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৪ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩৭৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ৪৪ জনের ১৯ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পরীক্ষায় অনুপস্থিত। এদিকে শোলাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮টি প্রতিষ্ঠানের ৬২২ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ১৩ জনের ১০ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারাও প্রথম পরীক্ষা দেয়নি।
অন্যদিকে ইসলামিয়া আদর্শ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ৬৫৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও ১৮ ছাত্রী বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার প্রবেশপত্রই সংগ্রহ করেনি অনেকে। কারিগরি ৩টি প্রতিষ্ঠানের ২৯৯ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিত ১৬ জনের ৪ জন মেয়ে। মধুপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়ে তিনি কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব ও শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান চুন্নু জানান, শিক্ষা জীবন থেকে অনেক সম্ভাবনাময় ছাত্রী এভাবে ঝরে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে।