চাঁদাবাজীর অভিযোগে সদর থানার এসআইকে ক্লোজ ॥ সোর্স আটক
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে পুলিশের এসআই ও সোর্সের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে সদর থানা ঘেরাও করে গ্রামের সাধারণ জনতা। শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে রক্ষিতবেলতা গ্রামের লোকজন প্রথমে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার প্রধান ফটকের সামনে এসআই জেসমিন আক্তার ও সোর্স বক্কর হোসেনের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভের পর থানায় গিয়ে প্রবেশ করে অভিযোগ দেয়।
পরে রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে ওই এসআই জেসমিন আক্তারকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান। তিনি বলেন, সোর্স বক্কর হোসেনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, গত (২৮ মার্চ) রক্ষিত বেলতা এলাকায় ছেলের সামনে রেজিয়া বেগম নামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করে ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী থাকায় পুলিশ বিভিন্নজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এসআই জেসমিন আক্তার ও তার সোর্স বক্কর হোসেন কয়েকজনকে আটক করে মোটা অংকের টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৭ এপ্রিল) পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন রক্ষিত বেলতা এলাকায় হাজী আয়নাল হকের বাসায় গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে কয়েকজনে মিলে বক্কর হোসেনকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে টাঙ্গাইল থানার এসআই জেসমিন আক্তার গিয়ে বক্কর হোসেনকে উদ্ধার করে ও সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসে। এরপরই ওই গ্রামের নারী-পুরুষরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শনিবার রাতে সদর থানা ঘেরাও করে।
রক্ষিত বেলতা গ্রামের বাসিন্দা হারেজ আলী টিনিউজকে বলেন, আমি সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে আমাকে করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। একই গ্রামের সুফিয়া বেগম টিনিউজকে বলেন, আমার স্বামীকে এসআই জেসমিন আক্তার আটক করে। পরে আমরা ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। পুলিশ মুল আসামীকে আটক করে শাস্তি প্রদান করুন। তারা কেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। আমি এসআই জেসমিন আক্তারের বদলি দাবি করছি। হাজী আয়নাল হক টিনিউজকে বলেন, শনিবার (২৭ এপ্রিল) আছরের নামাজ পড়ে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটার সময় এসআই জেসমিনের সাথে দেখা হয়। তিনি গাড়ি থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার নাম কি হাজী আয়নাল? আমি হ্যা বলায় আমার নাম ঠিকানা তিনি খাতায় লিখে চলে যায়। অপরদিকে আমার বাড়িতে পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে কয়েকজন মিলে বক্করকে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করি। পরে জেসমিন আমাকেসহ এলাকাবাসীকে হুমকি ধামকি দেয়। জেসমিন বলেন, বক্করের কিছু হলে এলাকার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আয়নাল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম টিনিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় কে বা কারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেটি আমার জানা নাই। তবে পুলিশ অপরাধীদের না ধরে সাধারণ মানুষকে আটক করে টাকা লেনদেনের বিনিময়ে তাদের ছেড়েও দেয়। এছাড়াও বক্কর হোসেন আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা দাবি করে। না দিলে বিভিন্ন হুমকি-ধামকিও দেয়। এর আগেও আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে সদর থানার এসআই জেসমিন আক্তার টিনিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমার নামে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান টিনিউজকে বলেন, রক্ষিত বেলতা ও পাইনা পানতা গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ঝগড়া চলে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রক্ষিত বেলতা এলাকায় গত (২৮ মার্চ) একটি মহিলাকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার কোন ক্লু না পাওয়ায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিপূর্বে বেল্লাল মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে পুলিশের সোর্স বক্করকে ওই গ্রামের লোকজন আটক করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এর পর সন্ধ্যার পর রক্ষিত বেলতা গ্রামের ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে আসলে তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।