ঘাটাইলের সবজি চাষিদের এবার বেশ লোকসানে পড়তে হবে
আব্দুল লতিফ, ঘাটাইল ॥
কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ও প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলাগুলোতে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক হাট-বাজার বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। যে কারণে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ গণপরিবহন। তবে জরুরি প্রয়োজনে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও তার সংখ্যা খুবই কম। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি থাকলেও হাট-বাজারগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি ঈদের মতো। জনসমাগম এড়াতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী আরো কঠোর অবস্থান গিয়ে হাটগুলোও সীমিত করে দেয়। এতে চরম বিপাকে পড়েছে উত্তর টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিরা। তাদের জমিতে উৎপাদিত সবজি ফলন ভালো হলেও সাপ্তাহিক হাট ও বাজারগুলো বন্ধের কারণে তা বিক্রি করতে পারছে না।
সরেজমিনে ঘাটাইল উপজেলার আথাইল শিমুল, নয়াপাড়া বীরসিংহ, পাঁচটিকড়িসহ বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের সাথে আলাপ হলে এমন বিষয়গুলোই তুলে ধরেন চাষিরা। উপজেলার বীরসিংহ গ্রামের সবজি চাষি আল আমীন টিনিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ৬০ শতাংশ মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছি। এতে ফলনও গত বছরের চেয়ে এবার খুব ভালো হয়েছে। তবে গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে হাট ও বাজারগুলোতে পাইকারি বাজারে ক্রেতা ও সবজির কোন চাহিদা নেই এবং ফলন ভালো থাকা সত্বেও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। ঘাটাইলের পাঁচটিকড়ি গ্রামের চাষি বাছেদ আলী টিনিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া আবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। পাইকারি বাজারে চাহিদা না থাকায় পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচও উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হবে।
পাইকারি ব্যবসায়ী শফিক মিয়া টিনিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে সব হাট, বাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এরপরেও পেটের দায়ে নির্দেশ অমান্য করে অনেক সবজি বিক্রেতা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা হাটে আসি। পাইকারি সবজি কিনে হাটে বিক্রি করি। কিন্তু হাটে পুলিশের আতঙ্ক ও ভয়ে শাক-সবজি বেচা-কেনা করতে পারছি না। সবজি চাষি ফজলুর রহমান টিনিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সবজির ফলন ভালো হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে ক্রেতা নেই। যে কারণে সবজি চাষিদের এবার বেশ লোকসানে পড়তে হবে। এছাড়াও সার, কীটনাশক ও বীজের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারিভাবে কৃষকদের জন্য সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানান তিনি। এদিকে, সবজি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কিন্তু এই দুর্যোগ মূহুর্তে উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কোন কর্মকর্তাও সহযোগিতার আশ্বাস দেয়নি।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিসার ড. উম্মে হাবিবা টিনিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় সবজির ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজারদর কম থাকায় উপযুক্ত দাম পাচ্ছে না চাষিরা।
বিষয়টি অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ সবজি চাষিদের প্রণোদনার আওতায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কৃষকদের হতাশ না হওয়ার আহবান জানান তিনি।