কিশোর বয়সেই জেএমবিতে জড়িয়ে পড়েন দেলদুয়ারের তারেক
মাসুদ আব্দুল্লাহঃ
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খান হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থেকে গ্রেপ্তারকৃত তরিকুল ইসলাম তারেক (২৫) কিশোর বয়সেই যুক্ত হয়ে যান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র সাথে। কিন্তু এলাকার মানুষ জানতো না সে কথা। বিগত ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পর সবাই জেনে যায় তার জঙ্গি জীবনের কথা।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মৌলভীপাড়া জামে মসজিদের সাবেক ইমাম আব্দুল্লাহেল বাকী ওরফে পিয়ারা মৌলভীর আট ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তরিকুল। এলাকাবাসী টিনিউজকে জানান, শায়েক আব্দুর রহমান ২০০৩ সালের দিকে দেলদুয়ারে জেএমবির কার্যক্রম শুরু করেন। সে সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তরিকুল ও তাদের পরিবারের অনেকেই যুক্ত হন জেএমবির সাথে। তারা দেলদুয়ারের বারপাখিয়া গ্রামে জেএমবির প্রশিক্ষন কেন্দ্রে নিয়মিত প্রশিক্ষন গ্রহন করতেন। বিগত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা ঘটনার পর টাঙ্গাইলে গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গি পুলিশকে জানায়, এই বোমা হামলায় তরিকুলসহ বেশ কয়েকজনের জড়িত থাকার কথা। তারপর তরিকুল আত্মগোপন করেন। প্রায় ছয় মাস আত্মগোপনে থাকার পর চট্রগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন তরিকুল। প্রায় ছয় বছর কারাভোগের পর জামিন লাভ করেন তরিকুল। পরে আবার স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করার পর দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি আরফান আলী কলেজে ভর্তি হন। এখন তিনি ওই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
উপজেলা সদরের মৌলভীপাড়ায় তরিকুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বৃদ্ধ বাবা, মা ও এক ভাই মাসুদ মিয়া বাড়িতে রয়েছেন। মাসুদ মিয়া টিনিউজকে জানান, তিনি সাভার ইপিজেড এলাকায় একটি দোকান করেন। ভাইয়ের গ্রেফতারে খবর শুনে বাড়ি আসেন। ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলার পর তরিকুল প্রায় ছয় মাস নিখোঁজ ছিল। পরে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন। পাঁচ-ছয় বছর কারাগারে ছিল। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তাকে প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতে হতো। ওই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম টিনিউজকে জানান, তরিকুলদের পরিবারের অনেক সদস্যই জেএমবির সাথে যুক্ত। তার এক চাচা ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে। তার বোন জামাই জামালপুরের সরিষাবাড়ি এলাকায় জেএমবির সাথে যুক্ত। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।
তরিকুলদের বাড়ির সামনে চায়ের দোকানে কথা হয় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে। জেএমবি বলে কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি। তারা টিনিউজকে জানান, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তরিকুল এলাকার কারো সাথে তেমন মিশতেন না। নিয়মিত বাড়ির সামনে মসজিদে এসে নামাজ পড়তেন। গত ১৪ নবেম্বর বুধবার বিকেলে আসরের নামাজ পড়তে তরিকুল মসজিদে আসেন। তার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশ এসে মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়। তিনি বের হওয়ার পরেই গোয়েন্দারা তাকে আটক করে মসজিদের পেছনে তাদের বড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তল্লাশি চালানোর পর তাকে নিয়ে চলে যায় গোয়েন্দারা।
দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন টিনিউজকে জানান, ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল এসে দেলদুয়ার থানাকে অবহিত করে মৌলভীপাড়ায় অভিযান চালায় এবং তরিকুল নামে এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।