কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গত সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় কালিহাতি ও ঘাটাইল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ চার উপ-পরিদর্শক ও তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। টাঙ্গাইলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে টাঙ্গাইল থেকে প্রত্যাহার করার সুপারিশ করা হয়েছে। ঘটনার জন্য কতিপয় পুলিশ সদস্যের অপরিনামদর্শী আচরন, যথা সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের অভাব ও বিরোধী রাজনৈতিক জোটের ইন্দনকে দায়ী করেছে পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। পুলিশ ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করলে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (শৃঙ্খলা) আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ বিভাগ। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) এবং ঢাকা রেঞ্জ অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আখতারুজ্জামান। তদন্ত শেষে তারা ৪১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দিয়েছে।
পুলিশ বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর কালিহাতি উপজেলা সদরের সাতুটিয়া এলাকায় মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার মা ও ছেলে পার্শবর্তী ঘাটাইল উপজলোয় হওয়ায় কালিহাতী ও ঘাটাইলে উভয় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী গত ১৮ সেপ্টেম্বের কালিহাতী থানা ও নির্যাতনকারীদের বাড়ি ঘেরাওয়ের র্কমসূচির আয়োজন করে। ওই দির বিকাল পৌনে চারটায় ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর বাজারে বিক্ষুব্ধ লোকজন সমবতে হয়। পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠির্চাজ করলে তাঁরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ভাংচুর শুরু করে। সেখানে র্কতব্যরত ঘাটাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুনসুপ আলী তাঁর পিস্তল দিয়ে সাত রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরাও উত্তেজিত জনতার উদ্দেশে গুলি বর্ষণ করে। এতে শামীম নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকলে নিক্ষেপ শুরু করে। সেখানে র্কতব্যরত কালিহাতী থানার এসআই মোহাম্মদ সলমিউদ্দনি পিস্তল দিয়ে একটি গুলি করে, কনস্টবেল আমিনুল রাইফেল দিয়ে একটি গুলি, কনস্টবেল জিয়াউল হক ও তমাল চন্দ্র দেব শর্টগান দিয়ে পাঁচটি গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ফারুক হোসেন, শ্যামল চন্দ্র দাস ও রুবেল হোসেন নামেন তিনজন মারা যান।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ সদস্যরা গুলি করলে থানার সাবেক ওসি শহীদুল ইসলাম গুলিবর্ষনের সঠিক সংখ্যা এবং হতাহত ব্যক্তিদের সংখ্যা র্ঊধ্বতন র্কতৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে র্ব্যথ হয়েছেন। তিনি র্ঊধ্বতন র্কতৃপক্ষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে পুলিশ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ করা গুলির সংখ্যা ঠিক আছে। আর এ র্স্পশকাতর বিষয় নিয়ে বিক্ষোভ হলেও ঘাটাইল থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ মোকলছেুর রহমান তা প্রতিরোধের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করনেনি। তিনি উত্তেজনা প্রশমনে জনসংযোগ করনেনি। এমনকি ঘটনাস্থলে অবস্থান না করে থানায় অবস্থান করেন। পরে ভয়াবহতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে যেনতেনভাবে ঘটনাস্থলে হাজির হন। যা তাঁর র্কতব্যে অবহেলা, অদক্ষতা ও উদাসীনতা বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লখে করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে টাঙ্গাইলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোহাম্মদ শফিকুর রহমান তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁরা ঘটনার দিন পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের আগে কোনো প্রকার নিদের্শনা দেননি। এছাড়া মা ও ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষপে নেননি।
এই দুই র্কমর্কতাকে টাঙ্গাইল থেকে প্রত্যাহার করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কালিহাতী থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম (র্বতমানে রংপুর অঞ্চলে সংযুক্ত), ঘাটাইল থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান (র্বতমানে খুলনা অঞ্চলে সংযুক্ত), কালিহাতী থানার এসআই আবুল বাশার, ছলিমউদ্দিন, কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম, জিয়াউল হক ও তমাল চন্দ্র দেব এবং ঘাটাইল থানার এসআই ওমর ফারুক ও মুনসুপ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। এছাড়া ঘাটাইল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হারুন অর রশীদকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বর্পূণ ইউনিটে বদলি করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইতিমধ্যে দোষী প্রত্যকেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।