কালিহাতীতে চলছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার শেষ চেষ্টা
এম কবির/ সোহেল রানা ॥
সারাদেশের ন্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্ব-স্ব দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ডেও তদবীর অব্যাহত রেখেছেন। নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছেন সোনার হরিণ নামের দলীয় টিকেট পাওয়ার জন্য। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চোখে ঘুম নেই। নির্বাচনে জয়লাভের চেয়ে টিকেট পাওয়ার যুদ্ধটাই এখন বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বৃহৎ এবং সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন বর্তমান এমপি হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ও এফবিসিসিআই পরিচালক, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু নাসের। এছাড়াও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিনী লায়লা সিদ্দিকী মাঠে রয়েছেন। এদিকে দল থেকে বহিস্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দল থেকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি শেখ হাসিনার বাইরে কোন কিছু করতে নারাজ বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা।
বর্তমান এমপি সোহেল হাজারী উপজেলার মাঠে ময়দানে, গ্রামে গ্রামে, চা ষ্টলে উঠান বৈঠক করে ব্যাপক গণসংযোগ করে চলেছেন। এমন কোন দিন নেই তিনি মাঠে গণসংযোগ না করছেন। সোহেল হাজারীর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান এমপি সোহেল হাজারী সবচেয়ে জনপ্রিয়। তার সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে বিগত ৪০ বৎসরেও সে উন্নয়ন হয়নি। কাজের মূল্যায়নে সোহেল হাজারী আবারও মনোনয়ন পাবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি ঢাকাতেও জোড় তদবির করছেন। তার দাবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী ও জনগণ তার সাথে রয়েছেন। তৃণমূলের সমর্থন নিলে নেত্রী তাকেই মনোনয়ন দিবে। এফবিসিসিআই পরিচালক, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু নাসের দীর্ঘদিন যাবত মাঠে রয়েছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী বলে তাদের অনুসারীরা জানিয়েছে। অপরদিকে লায়লা সিদ্দিকী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং চালাচ্ছেন বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় থাকলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বর্তমান এমপি সোহেল হাজারী ও সাংগঠনিক দিক দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু এগিয়ে। বর্তমান সরকার মিডিয়া বান্ধব থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী সম্প্রতি স্থানীয় যুগধারা পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করলে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন।
বিএনপিতে দীর্ঘদিন যাবৎ মাঠে রয়েছে গত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী লুৎফর রহমান মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের সহ-ধর্মিনী রাবেয়া সিরাজ। সম্প্রতি বিএনপির সহ-সভাপতি তারেক জিয়ার নির্দেশে উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে লুৎফর রহমান মতিনকে বাদ দিয়ে শুকুর মাহমুদকে আহ্বায়ক করায় রাজনীতি থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছেন লুৎফর রহমান মতিন। ফলে পাল্টে গেছে উপজেলা বিএনপির হিসাব নিকাশ। শুকুর মাহমুদের অনুসারীরা বলছেন যেহেতু নির্বাচনের আগে মতিনকে বাদ দিয়ে শুকুর মাহমুদকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী সঙ্কট থাকায় নবগঠিত জোট ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এ আসনটি থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসা এ দলটির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোস্তাক হোসেন রতন, আজিজুর রহমান তালুকদার। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে রয়েছেন উপজেলা জাসদের সভাপতি শামছুল হক মহসিন।
সর্বোপরি দলীয় মনোনয়নের উপর নির্ভর করবে জয়-পরাজয়। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই বড় দুই দলেই নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ভোটের মাঠে কোন্দল না মিটাতে পারলে কারও জন্যেই ফলাফল শুভ হবে না বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা। কাদের সিদ্দিকীর জোটে থাকা না থাকার বা একক নির্বাচনের উপর নির্ভর করবে এ আসনের ভোটের ফলাফল।