কালিহাতীতে কথিত জিনের বাদশার নির্যাতনে মৃত্যুশয্যায় ছাত্রী
সোহেল রানা, কালিহাতী ॥
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জিনের বাদশা সেজে কলেজ ছাত্রীকে (২০) নির্যাতন করেছে ৭০ বছরের বৃদ্ধ হাজী দারোগ আলী। এ ঘটনায় বর্তমানে ওই কলেজ ছাত্রী মৃত্যু শয্যায় রয়েছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে কালিহাতী উপজেলার মাদারিয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা ঘটার পর থেকে কথিত জিনের বাদশা একই গ্রামের হাজী দারোগ আলী (৭০) পলাতক রয়েছে। জিনের বাদশা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে পিতৃহীন অসহায় শাহনাজের পরিবার।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পাশ্ববর্তী বাড়ীর হাজী দারোগ আলী বলেন যে, “ওই ছাত্রীকে জিনে ধরেছে। জিনের বাদশা ছাড়া তাকে বাঁচানো যাবে না।” এ সময় উক্ত হাজী দারোগ আলী নিজেই জিনের বাদশা সেজে কলেজ ছাত্রীকে সারা শরীরে স্পর্শ করে ঝাড়-ফুক দিতে থাকে। এক পর্যায়ে কথিত জিনের বাদশা দারোগ আলী ছাত্রীকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। জিনের বাদশার নির্যাতনে ওই ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ীর আব্দুর রাজ্জাক রাত ১২টার দিকে পার্শ¦বর্তী ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে।
উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক ওই ছাত্রীকে মেডিক্যাল চেকআপ, সিটিস্ক্যানসহ বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। কিন্তু নির্যাতনকারী কথিত জিনের বাদশার ছেলেদের প্রভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুমুর্ষু ওই ছাত্রীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে ওই ছাত্রীকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সে তার নিজ বাড়ীতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ দিকে সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে কথিত জিনের বাদশা বাড়ীর পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিনের বাদশা পলাতক রয়েছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে ওই ছাত্রীর পরিবার। জানা যায়, পিতৃহীন শাহনাজ তার মা ও এক প্রতিবন্ধী চাচাকে নিয়ে বসবাস করে আসছিল। সেই সুযোগে কথিত জিনের বাদশা হাজী দারোগ আলী এ ঘটনা ঘটায়।
এ ব্যাপারে অসুস্থ ওই কলেজ ছাত্রী সাংবাদিকদের জানায়, আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ওই ছাত্রীর বিধবা মা জানান, রাতে পুলিশ এসেছিল আমি ভয়ে বলেছি খাট থেকে পড়ে চোখে ব্যাথা পেয়েছে। কিন্তু আসলে জিনের বাদশার নির্যাতনে আমার মেয়ের চোখ এমন হয়েছে। আমার মেয়ের কিছু হলে আমি বিয়ে দিবো কিভাবে। আমার স্বামী নাই। দেবর-ভাসুরেরা ঢাকা থাকে। তারা এসে ব্যবস্থা নিবে।
অভিযুক্ত নির্যাতনকারী জিনের বাদশার বাড়ীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশে স্থানীয় বাসিন্দারা টিনিউজকে জানান, নির্যাতনকারীদের ভয়ে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার সত্য বলার সাহস পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার (ওসি) হাসান আল মামুন টিনিউজকে জানান, ঘটনাস্থলে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। সত্যতা পাওয়া যায়নি।