কালিহাতীতে আ.লীগের বিদ্রোহী সামলানো ॥ বিএনপির অস্তিত্বের লড়াই
দীর্ঘ ৭ বছর পর হতে যাচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুধের স্বাদ ঘোলা মেটাতে প্রস্তুুত টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরবাসী। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তৈরী হচ্ছে নানা সমীকরণ ও মেরুকরণ জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ চলছে সর্বত্র। প্রচ- শীত উপেক্ষো করে প্রার্থীরা দিন রাতে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন বিভিন্ন ভাবে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোটারদের কথায় ফুলঝুড়িতে আল্পুত না করে বিশ্লেষন করছেন বাস্তবতা। তবে এবারই দলীয় প্রতীক নির্বাচন, তাই পেয়েছে ভিন্নি মাত্রা। নেতাকর্মীরা নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে করছেন ব্যাপক প্রচারণা, কঠোর পরিশ্রম। উপন্থাপন করছেন নিজনিজ প্রার্থীর পক্ষের সর্বোচ্চ যুক্তি।
১৫.৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কালিহাতী ইউনিয়ন থেকে ১৯৯৮ সালে পৌরসভায় রুপান্তরিত হয়। ২০১১ সালে গ’ থেকে খ’ শ্রেণীতে পৌরসভাকে উন্নিত করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আনসার আলী বিকম বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আলী আকবর জব্বারকে পরাজিত করেন। এবার ২০১৫ সালের নির্বাচনে কালিহাতীতে মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকলেও মূল লড়াই হবে আনসার আলী (নৌকা) এবং আলী আকবর জব্বারের (ধানের শীষ) মধ্যে। কিন্তু সতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য হুমায়ুন খালিদকে (নারিকেল গাছ) নিয়ে কিছুটা বেকায়দা রয়েছে আওয়ামী লীগ শিবিরে। জয় পরাজয়ের ফ্যাক্টর হয়ে যেতে পারেন তিনি। এদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জব্বার রয়েছেন স্বস্তিতে। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে কালিহাতী পৌরসভায় মা-ছেলেকে যৌন নির্যাতন এবং পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে নির্বাচনে। দল থেকে অপসারিত আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং বিএনপির শাহজাহান সিরাজের কালিহাতীতে রয়েছে ব্যক্তিগত ভক্ত অনুসারি। এই দুইজন সাবেক মন্ত্রীর ইশারা নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। একদিকে আওয়ামী লীগ আসন ধরে রাখতে মরিয়া, অন্যদিকে বিএনপির অস্তিত্বের লড়াই।
আওয়ামী লীগের মনোনীত আনসার আলী বিকম বলেন, আমি দল ও মানুষের জন্য জীবন যৌবন সব উৎসর্গ করেছি। কালিহাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে জনগনের জন্য কাজ করেছি মেয়র হিসেবেও করছি। তাই আমার অতীত বর্তমান মূল্যায়ন করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে পৌরবাসি আমাকেই বিজয়ী করবেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলী আকবর জব্বার বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকিত। জনগন অবাধে ভোট দিতে পারলে আমি জয়লাভ করবই।
৯টি সাধারন কাউন্সিলর পদে ৩৩জন এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জনের নির্বাচন দলীয় প্রতিকে না হলেও দলীয় সমর্থন প্রভাব বিস্তার করছে। তবে পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা অগ্রগন্য। বেশ কয়েকজন সাধারণ ভোটারের সাথে কথা বললে তারা জানান, যেসকল প্রার্থী নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত এবং জনগনের জন্য কাজ করবেন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত কালিহাতী গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর আমরা তাকেই ভোট দিব। পৌরসভার মোট ভোটারের প্রায় ১৪ ভাগ হিন্দু ভোটারের সমর্থন যেকোন প্রার্থীর জন্য প্লাস পয়েন্ট।
কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসির উদ্দিন বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন।
পৌরসভার পুরুষ ১২১৫০ জন মহিলা ১২৬৫২ জন ভোটার রয়েছে। ১০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। ১০ জন প্রিজাইডিং, ৭১ জন সহকারি প্রিজাইডিং এবং ১৪২ জন পোলিং অফিসার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকবেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়ন থাকবে। সাথে মোবাইল টিম এবং স্টিয়ারিং ফোর্স মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবে।