কালিহাতীতে আগামী নির্বাচনে ‘সক্রিয়’ শাজাহান সিরাজ কন্যা সারওয়াত

273

স্টাফ রিপোর্টার ॥
জাসদ, গণফোরাম কিংবা বিএনপি- শাজাহান সিরাজ যখন যে দল করেছেন, অনুসারীরা তাঁর সঙ্গে সেই দলেই গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরও টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে আছেন সেই অনুসারীরা। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছেন শাজাহান সিরাজের মেয়ে সারওয়াত সিরাজ শুক্লা।
জানা যায়, সারওয়াত সিরাজ শুক্লা সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় (ব্যারিস্টার) নিয়োজিত। তিনি তাঁর পিতার করা সর্বশেষ রাজনৈতিক দল বিএনপির হয়ে নয়, এলাকায় কাজ করছেন ‘শাজাহান সিরাজ কল্যাণ ট্রাস্ট্রে’র ব্যানারে। বিভিন্ন সামাজিক ও সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে শাজাহান সিরাজের অনুসারীদের সংগঠিত করছেন। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, বাবার আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তা করছেন সারওয়াত। তবে কোন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো আভাস পাওয়া না গেলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন তিনি।




স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ৯ বার কালিহাতী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন বিএনপি সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য।
সারওয়াত সিরাজ এলাকায় কাজ শুরু করার পর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাছির আহমেদ খান। তিনি টিনিউজকে বলেন, আমরা যাঁরা শাজাহান সিরাজের অনুসারী আছি, তাঁরা সবাই তাঁর মেয়ের সঙ্গেও আছি। তিনি প্রার্থী হলে ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া যাবে। অবশ্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম টিনিউজকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে শাজাহান সিরাজের পরিবারের কারও এখন যোগাযোগ নেই। তারা বিএনপি করে না। তাই তাদের খোঁজখবর কেউ রাখে না।




শাজাহান সিরাজ কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্র টিনিউজকে জানায়, কয়েক বছর ধরে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ নানা সামাজিক কাজ করছেন সারওয়াত সিরাজ। এ বছর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতার্ত ব্যক্তিদের মাঝে তিনি কম্বল বিতরণ করেছেন। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ওই সব এলাকায় শাজাহান সিরাজের পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও জনসংযোগ করেছেন। এছাড়া কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস শাজাহান সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও কালিহাতীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
সারওয়াত সিরাজ সর্বশেষ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দিনব্যাপী কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের রতনগঞ্জ বেবিস্টান্ডে ও বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের কস্তুরীপাড়া বাজারে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাজাহান সিরাজের সাবেক এপিএস আনোয়ার হোসেন বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক মহসিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর হেলাল, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের শিক্ষক রশিদুল ইসলাম রতন প্রমুখ।




এ সময় ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা বলেন, উপজেলার দুই হাজার দুস্থ মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হবে। আমার বাবা কালিহাতীর মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন সারা জীবন। তার মেয়ে হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কালিহাতীর সার্বিক উন্নয়নে কাজের মাধ্যমে আপনাদের সেবা করে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সারওয়াত সিরাজ বলেন, সামনের মাসগুলোয় রাজনীতির নানা মেরুকরণ হবে। এলাকার মানুষের চাওয়া ও রাজনীতির মেরুকরণের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। সারওয়াত সিরাজ বলছেন, কালিহাতীজুড়ে তাঁর বাবার অনেক অনুসারী রয়েছেন। তাঁদের নিয়েই এলাকায় কাজ করছেন। নির্বাচনে অংশ নেন বা না নেন, কালিহাতীতে যে সামাজিক ও সমাজসেবামূলক কাজ শুরু করেছেন, তা অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারওয়াত সিরাজের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাদের দেখা যায়নি, বরং কোনো কোনো কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের অতিথি করা হয়েছে। গত বছরের মার্চে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা। এদিকে কালিহাতী উপজেলা সদরে শাজাহান সিরাজের প্রতিষ্ঠিত ‘কালিহাতী কলেজ’– এর নাম পরিবর্তন করে ‘শাজাহান সিরাজ কলেজ’ নামকরণ করা হয়েছে এ সরকারের আমলে। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সারওয়াত সিরাজ। এসব কিছু মিলিয়ে শাজাহান সিরাজের পরিবারের প্রতি আওয়ামী লীগের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায় বলে মনে করছেন সারওয়াতের ঘনিষ্ঠজনেরা।




অবশ্য কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার টিনিউজকে বলেন, সারওয়াত সিরাজ আগামী দিনে কী চিন্তা করছেন, তা তাঁর ব্যাপার। তিনি একজন আইনজীবী। রাজনীতিতে তাঁর কোনো ভূমিকা কখনো দেখা যায়নি। শাজাহান সিরাজ একসময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এজন্য আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তবে স্বাধীনতার পর থেকে তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছেন। কালিহাতীতে আওয়ামী লীগের যথেষ্ট ক্ষতি করেছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা টিনিউজকে জানান, এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার পর জাসদের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন। কিছু সময় গণফোরাম করার পর বিগত ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন। বিগত ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বিগত ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ‘আত্মগোপনে’ চলে যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে কালিহাতী থেকে বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান লুৎফর রহমান। এর মধ্য দিয়েই কালিহাতী বিএনপির নিয়ন্ত্রণ শাজাহান সিরাজের বাইরে চলে যায়। পরে শাজাহান সিরাজ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। কয়েক বছর অসুস্থ ছিলেন। বিগত ২০২০ সালের (১৪ জুলাই) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।