ঈদে টাঙ্গাইলের বিনোদন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়
জাহিদ হাসান ॥
পবিত্র ঈদুল ফিতর প্রচন্ড রোদ ও গরমের মধ্য দিয়ে বরণ করে নিল টাঙ্গাইলবাসী। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়েই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে টাঙ্গাইল জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে। শনিবার (২২ এপ্রিল) সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নানা বয়সের মানুষের ঢল নেমেছে। আনন্দ উদযাপন করতে এসব স্পটগুলোতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। জেলার এসব বিনোদন স্পটগুলোতে ঈদের ছুটি পর্যন্ত লোকজন আনন্দ উপভোগ করবেন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে।
বিনোদন স্পটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতি উপভোগ করতে মধুপুর বনাঞ্চল, মধুপুর বিএডিসি বীজ উৎপাদন খামার, ধনবাড়ী নবাব বাড়ী, গোপালপুরে নির্মানাধীন ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, হেমনগর জমিদার বাড়ী, ভূঞাপুর যমুনা নদী র্তীরবর্তী এলাকা, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা, নৌপথে গোবিন্দাসী থেকে গাবসারা চরাঞ্চল, কালিহাতীর চারান বিল, এলেঙ্গা রিসোর্ট, ঘাটাইলের ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ী, ঘাটাইল-ঝড়কা ও ধলাপাড়া সড়ক, ঘাটাইল শাপলা শিশু পার্ক, সখীপুর বনাঞ্চল, বাসাইলের বাসুলিয়া, মির্জাপুর মহেড়া জমিদার বাড়ী, দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী, আতিয়া জামে মসজিদ, নাগরপুর জমিদার বাড়ী, ধলেশ্বরী সেতু, উপেন্দ্র সরোবর, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী, নাগরপুর ধুবুরিয়া স্বপ্ন বিলাস চিরিয়াখানা, টাঙ্গাইলের ডিসি লেক, টাঙ্গাইলের এসপি পার্ক, ঘারিন্দা রেলস্টেশনগুলোতে দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
এ বিনোদন কেন্দ্রগুলোসহ এসব এলাকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ আর গ্রুপ ছবি তোলা, সেলফি ও আড্ডায় সময় কাটাচ্ছেন বিনোদন পিপাসু দর্শনার্থীরা। স্পটগুলোর অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো না হলেও ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে তারা এসব স্থানগুলোতে ছুটে আসছেন।
দশনার্থীরা টিনিউজকে জানান, দর্শনার্থীদের ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে এসব এলাকায় সাজসজ্জা, পর্যাপ্ত যানবাহন, শৌচাগার করা হলে এখানে গড়ে উঠতে পারে বড় পর্যটন কেন্দ্র। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। জেলার বাহিরেরও বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরতে আসছেন এখানে। প্রতিটি স্পটে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রঙ-বেরঙের পোশাক আর নানা সাজে সজ্জিত দর্শনার্থীরা। শিশু-কিশোররা নাগরদোলায় দোল খেয়ে আনন্দ উপভোগ করছে। নানা আতংকে এবারের দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ঈদের আনন্দে কোন ভাটা পড়েনি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঈদের এই দিনে স্বপরিবারে বেড়াতে আসেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন। তিনি টিনিউজকে জানান, সারা বছর ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। এবার ঈদের এই সুযোগ পেয়ে সবাইকে নিয়ে শশুরবাড়ি টাঙ্গাইলে চলে এসেছি। তবে বিভিন্নস্পটে ভাল শৌচাগার না থাকায় মহিলা দর্শনার্থীদের অস্বস্থিতে পড়তে হচ্ছে। ঘুরতে আসা আরেক দর্শনার্থী বজলু মিয়া টিনিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর আশপাশের এলাকাগুলোকে অর্থনৈতিক জোন এলাকা ঘোষনা করা উচিত। ব্যক্তিগত কিংবা সরকারি উদ্যোগে এখানে হোটেল-মোটেল চালু করা হলে সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরো বাড়বে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল আলম টিনিউজকে জানান, টাঙ্গাইল জেলায় অনেক কিছু দেখার আছে। আমার পরিবারকে তাই নিয়ে ঘুরে দেখাচ্ছি।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার টিনিউজকে জানান, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন বিনোদন স্পটগুলোতে অনেক বেশি দর্শনার্থী এসেছে। তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহাসিক স্থান, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, টাঙ্গাইল শাড়ি, শালবন, মধুপুরের আনারস, প্রসিদ্ধ চমচমের জন্য টাঙ্গাইলের পরিচিতি থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে শহরে কোন বিনোদন কেন্দ্র ছিল না।
টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠা ডিসি লেক ও এসপি পার্কে শহর ও শহরতলীর বিনোদন পিপাসুরা আসেন পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত বিশাল এই লেক ও নদী এখন জেলার জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও উপচেপড়া ভিড় ছিল। এখন কাজের অনেকটাই শেষ পর্যায়ে। আরো আকর্ষণীয় করার জন্য বিনোদন কেন্দ্র দু’টির কাজ চলছে। এখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। তাই উৎসব ছাড়াও অধিকাংশ সময়ই ডিসি লেকে ও এসপি পার্কে বিনোদনপ্রিয় মানুষের ভিড় দেখা যায়। তবে ঈদের দিন ও এরপরেও ভিড় হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার কর্মচারীরা। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিনোদনস্পট গড়ে উঠেছে। দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে নজরকাড়া অনেক কিছু। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘাট। লেকের জলে ভেসে বেড়ানোর জন্য প্যাডেল বোট রয়েছে। এছাড়া লেকের পাড় ঘেঁষে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বানর, ব্যাঙ, ডাইনোসর, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে নানা জায়গায়। প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে শিশু পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড়। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজন এ লেকে ঘুরতে এসেছেন। কেউ প্যাডেল বোটে, আবার কেউ গাছগাছালি নিজ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শিশুরা আনন্দের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখছে নিজেদের। কেউ ট্রেন ভ্রমণ করছে, কেউ হেলিকপ্টারে ঘুরছে, কেউ দোলনায় দোল খাচ্ছে, আবার কেউ কেউ জাহাজে আনন্দের মুহূর্ত পার করছে। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শিশুপার্ক।
দর্শনার্থীরা টিনিউজকে জানান, ঈদ ছাড়াও অবসর পেলেই এখানে ঘুরতে আসেন তারা। বাচ্চারা পার্কের বিভিন্ন রাইডে উঠছে, ওরা খুব আনন্দ পাচ্ছে।